নওগাঁর মান্দায় বিতর্কিতরা নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় ত্যাগী নেতা ও তৃনমূলে ক্ষোভ বাড়ছে

নওগাঁর মান্দায় বিতর্কিতরা নৌকার মনোনয়ন পাওয়ায় ত্যাগী নেতা ও তৃনমূলে ক্ষোভ বাড়ছে

নওগাঁ প্রতিনিধি:

 

 

নওগাঁর মান্দায় হত্যা মামলার আসামিসহ এলাকার বিতর্কিতরা আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় মনোনয়ন বঞ্চিতদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে। এছাড়াও তৃনমূলের মানুষরা তাদের পছন্দের মানুষকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার কারণে দলের প্রতি আস্থা ও দলের হয়ে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

তৃতীয় ধাপে ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৮নভেম্বর বৃহত্তর মান্দা উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে এই মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই অনেক ইউনিয়নে প্রার্থী পরিবর্তনের জন্য বিক্ষোভ মিছিল মানববন্ধন ও সমাবেশে প্রার্থী পরিবর্তনের অনুরোধ করা হয়েছে।  না হলে ওইসব ইউনিয়নে নৌকার পরাজয় সুনিশ্চিত বলে দলের ত্যাগী নেতারা মত প্রকাশসহ দাবি করা হয়েছে।                                                      

স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার মান্দা সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়া তোফাজ্জল হোসেন তোফা দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। তার নামে পরকীয়ায় জড়িয়ে এক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মান্দা সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি সাংবাদিক ছায়েদ রায়হান মৃধাকে কালিকাপুর বাজরের পাশের্ব আত্রাই নদীর বালু মহালের শেয়ারের এক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ ও তার পেটুয়া বাহিনীর সদস্য আবদুল ওয়াহাব হিরা, নয়ন, বিদুৎ কুমারসহ উপজেলা চত্বরে প্রেস ক্লাবের সামনে ধরে মারপিট ও লাঞ্চিত করা, এমপি ইমাজ উদ্দিন প্রামানিকের ভাগিনা পরিচয় দিয়ে বিদ্যুত সংযোগ ও চাকুরি দেবার নাম করে  লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ। তার টর্চার সেলে বিচার সালিসের নামে নিরীহ মানুষকে ধরে এনে মারধর, হত্যার হুমকি ও বালু, মাটি ব্যবসায় সিন্ডিকেট করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া সম্প্রতি এক ধর্ষণ মামলার আসামিকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে আপোষের সময় খবর পেয়ে আসামি গ্রেফতার করতে মান্দা থানার উপপরিদর্শক আতিউর রহমানসহ সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যরা সেখানে গেলে চেয়ারম্যান ও তার ক্যাডার বাহিনী উপপরিদর্শক আতিউর রহমানকে বাড়ির একটি কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে ওসি খবর পেয়ে সেখান থেকে আসামি গ্রেফতারসহ অবরুদ্ধ উপপরিদর্শক আতিউর রহমানকে অবমুক্ত করেন।                                                       

উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামীলীগের অন্যতম নেতা আলমগীর  হোসেন বলেন, আমিসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বাবু অনুপ কুমার, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ১নং ওয়ার্ড সভাপতি সাংবাদিক ছায়েদ রায়হান ও ৪ নং ওয়ার্ড সভাপতি বেলাল হোসেন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগের এসব ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে একজন বিতর্কিত ব্যক্তি নৌকা প্রতীক পাওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

১ নং ভারশোঁ ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আলতাজ হোসেনকে না দিয়ে সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমনকে পুনরায় দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মাদক সেবনসহ বিচারের নামে প্রহসন ও বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ১১নং কালিকাপুর  ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল আলিম মন্ডলের বিরুদ্ধে মাদক সেবনসহ জনগণকে হয়রানির নানা  অভিযোগ রয়েছে। এখানে সজ্জনখ্যাত  ও সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ প্রার্থী ছিলেন। গতবার এখানে তিনি অল্প ভোটের জন্য জিততে পারেননি।

৯ নং তেঁতুলিয়া  ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ইউনিয়ন সভাপতি গাজীবুর রহমান। নুরুল্যাবাদ ইউপির সবার গ্রহণযোগ্য নেতা অধ্যক্ষ মোজাফফর হোসেনকে না দিয়ে দেয়া হয়েছে স্বাধীন কৃষ্ণ রায়কে। আবার মৈনম ইউপির বর্তমান ও তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ইয়াছিন আলী রাজার পরিবর্তে দেওয়া হয়েছে সামন্ত কুমার সরকারকে। এসব ইউনিয়নে বর্তমানে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।                        
এলাকার ত্যাগি নেতা-কর্মী ও সময়র্থকরাসহ সর্বসাধারণ বলছেন, এসব ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী পরিবর্তন না হলে নৌকার পরাজয় সুনিশ্চিত।

 

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন